Thursday, August 22, 2019

পৃথিবী জুড়ে মানুষের তৈরি আশ্চর্য স্থাপত্য।

 

পৃথিবী জুড়ে মানুষের তৈরি আশ্চর্য স্থাপত্য।

আমরা বরাবরই জেনে এসেছি পৃথিবীতে প্রচুর আশ্চর্যময় স্থাপত্য তৈরি হয়েছে যুগে যুগে! তা আবার মানুষের দ্বারাই। বিভিন্ন শাসক বা গোষ্ঠীর দ্বারা নানান সভ্যতা গড়ে উঠেছে এই পৃথিবীতে। যেমন মানুষের হাতে সৃষ্টি বা নির্মাণ করা হয়েছে বহু স্থাপত্য। তেমনি বিভিন্ন আশ্চর্য্যময় প্রাকৃতিক সম্পদও রয়েছে। আজও শতাব্দী প্রাচীন বহু স্থাপত্য টিকে আছে বহাল তবিয়তে।
আমরা আজ জানাবো সেই আশ্চর্য্যময় স্থাপত্যের কথা। যেগুলো মানুষের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।

১) তাজমহল 


ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। এর উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৭১ মি,।
তাজমহলের নির্মাণশৈলীতে রয়েছে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের মেলবন্ধন। সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধিটিই বেশ আকর্ষণীয় ও সমাদৃত। তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে এক আশ্চর্য অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

২) মাচুপিচু


মাচু পিকচু বা মাচু পিচু অর্থাৎ "পুরানো চূড়া"।কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগের সময়কার একটি ইনকা শহর, এর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ২৪০০ মিটার উঁচুতে। এটি পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার ওপরে একটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। মাচু পিচুকে ইনকাদের হারানো শহর বলা হয়।

এটি ১৪৫০ সালের দিকে নির্মিত হয়, কিন্তু এর একশ বছর পর ইনকা সভ্যতা যখন স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হয়। শহরটি মানব সুন্য ও পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

৩) স্টোনহেঞ্জ


স্টোনহেঞ্জ ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের অ্যামাসবারির নিকটে অবস্থিত। নিওলিথিক এবং ব্রোঞ্জ যুগের একটি স্তম্ভ যা মানমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্টোনহেঞ্জ কে প্রায় ১৫০০ বছর ধরে বিভিন্ন রকম গড়াপেটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

স্টোনহেঞ্জ ঠিক এরকম, বৃত্তাকারে বড় বড় দণ্ডায়মান পাথর রয়েছে। এবং এগুলোর চতুর্দিকে মৃত্তিকা নির্মিত বাঁধ রয়েছে। এর বাইরের দিকে একটি বৃত্তাকার পরিখা রয়েছে। এর প্রবেশ পথের কিছুটা দূরেই রয়েছে মাটির বাঁধ। এ বাঁধের ভেতর চতুর্দিকে বেষ্টন করে আছে ৫৬টি মৃত্তিকা গহ্বর। পাথরগুলোর মধ্যে আরও দুই সারি গর্ত বেস্টন করে আছে। পাথরগুলোর গঠনের মধ্যে আছে দুইটি বৃত্তাকার এবং দুইটি ঘোড়ার খুরের নলের আকারবিশিষ্ট পাথরের সারি। এ ছাড়াও কতগুলো পৃথক পাথর রয়েছে, অলটার স্টোন বা পূজা বেদীর পাথর বা শ্লটার স্টোন বা বধ্যভূমির পাথর।


স্টোনহেঞ্জের সবচেয়ে বড় পাথর গুলো যা “সারসন” নামে পরিচিত সেগুলোর গড় উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার এবং ওজন প্রায় ২৫ টন। ছোট পাথর গুলো যা নীল পাথর নামে পরিচিত সেগুলোর ওজন প্রায় ৪ টন পর্যন্ত।
স্টোন হেঞ্জ কি জন্য করা হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন মত আছে, কেউ কেউ বলেছেন, এটি একটি পবিত্র সমাধিস্থল। আবার কারো মতে, জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত কাজের জন্য এটি বানানো হয়েছে। আবার কারো মতে এটি, আরোগ্য লাভের একটি স্থান।

৪) হাজিয়া সোফিয়া 


এটি স্থাপন করা হয়েছিল অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৩৬০ খ্রীষ্টাব্দে, এর দৈর্ঘ্য ৮২ মিটার, প্রস্থ ৭৩ মিটার, উচ্চতা ৫৫ মিটার।


১২০৪ খ্রিস্টাব্দে এটা কে ক্যাথলিক গির্জায় রূপান্তর করা হয়। তারপর ১২৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পুনরায় অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল এর পতনের পর অটোমান সাম্রাজ্যের তৎকালীন শাসক ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ, মসজিদে রূপান্তরিত করেন। এই স্থাপনাটি ১৯৩৫ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পাশা, যাদুঘরে রূপান্তর করেন। ২০২০ সালে তুরস্কের আদালতের রায়ের পর, এটিকে পুনরায় মসজিদে রুপান্তর করা হয়।

৫) চীনের মহাপ্রাচীর 


চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। এই প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৮৮৫১.৮ কিলোমিটার। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস থেকে এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। এর মূল অংশের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে।


এটিই পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি পৃথিবীর দীর্ঘ প্রাচীর। এরকম অনেকগুলি প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তবে ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি বর্তমান প্রাচীরের অনেক উত্তরে অবস্থিত এবং এর খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়।

৬) কলোসিয়াম 


ইতালির রোম শহরে অবস্থিত একটি বৃহৎ উপবৃত্তাকার ছাদবিহীন মঞ্চ। ৫০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই মঞ্চ। সাধারণত গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিযোগিতা এবং জনসাধারণের উদ্দেশ্যে কোন প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহৃত হতো এটি। এখানে বসে মানুষ ও প্রাণীদের নানা ধরনের খেলা বা প্রদর্শনী উপভোগ করতেন রোমান সম্রাটরা। এবং এখানেই পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সম্রাট গ্লাডিয়েটরদের মারণপন লড়াইয়ের প্রতিযোগিতা শুরু করেন। কলোসিয়াম আজও অতীতের নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।


এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ৭০ থেকে ৭২ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় সম্রাট ভেসপাসিয়ানের রাজত্ব ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় এই স্থাপনার, নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল ৮০ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট তিতুসের রাজত্বকালে। পরবর্তী কালে কলোসিয়াম অবহেলা, ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে বহির্তোরণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখনও টিকে আছে।

৭) গিজার মহা পিরামিড 


বর্তমান মিসরের নীল নদীর পশ্চিম পাড়ে গিজা নামক স্থানে নির্মিত গিজার মহা পিরামিড। এটি তৈরি হয়েছিল ৫০০০ বছর আগে। এর নির্মাণ হয় চুনাপাথর, আর গ্রানাইট দিয়ে। এর উচ্চতা ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং এটি বানাতে শ্রমিক লেগেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডে তিনটি প্রধান প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এর গ্র্যান্ড গ্যালারির দৈর্ঘ্য ৪৭ মিটার, উচ্চতায় ৮ মিটার। বিজ্ঞানীরা পিরামিডটির ভেতরে একটি ‘বড় শূন্যস্থানের’ সন্ধান পেয়েছেন।


শুধু এই একটি পিরামিড নয়, মিশরের এরকম বহু পিরামিড আছে। কিন্তু গ্রেট পিরামিড বা মহা পিরামিড বলতে ফারাও শাসক খুফুর পিরামিড কে বলা হয়। এই পিরামিড সবার থেকে বড়।



তথ্য সংগ্রহ, গুগল সার্চ করে।

No comments:

Post a Comment