Monday, August 19, 2024

রাখি বন্ধন উৎসব

রাখি বন্ধন

রাখি বন্ধন আমাদের সমাজের একটি বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা মূলত ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ককে উদযাপন করতে পালন করা হয়। এই দিনটি ভাই-বোনের মধ্যে প্রেম, সুরক্ষা এবং দায়িত্বের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে। বোনেরা তাদের ভাইদের কব্জিতে রাখি বেঁধে তাদের জন্য দীর্ঘায়ু, সুখ এবং সমৃদ্ধির প্রার্থনা করে, আর ভাইয়েরা প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা তাদের বোনদের সবসময় রক্ষা করবে। এবং সকল বিপদ থেকে তাদের নিরাপদ রাখবে।

রাখি বন্ধনের ইতিহাস অনেক প্রাচীন এবং এটি আমাদের সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। পুরাণ ও বিভিন্ন কাহিনিতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতে, যখন শ্রীকৃষ্ণের আঙুল কেটে যায়, দ্রৌপদী তার শাড়ির একটি টুকরা ছিঁড়ে কৃষ্ণের আঙুলে বেঁধে দেয়। এর প্রতিদান হিসেবে, কৃষ্ণ তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি সবসময় দ্রৌপদীকে রক্ষা করবেন। এভাবেই ভাই-বোনের সম্পর্কের মধ্যে সুরক্ষার ধারণা শুরু হয়।

মধ্যযুগে, রাজপুত রানী কর্ণবতী তার রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখি পাঠান। এবং তাকে তার ভাই হিসেবে মেনে নেন। হুমায়ুন এই রাখির সম্মান রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। এই ঘটনার মাধ্যমে রাখি বন্ধন আরও ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। এবং সমাজে ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।

কথিত আছে যে, অ্যালেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করেন, তখন তার স্ত্রী রাণী পুরুকে একটি রাখি পাঠিয়েছিলেন। এবং তাকে ভাই হিসেবে মেনে নেন। পুরু এই রাখির সম্মান রক্ষা করতে আলেকজান্ডারের প্রাণ রক্ষা করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রাখি বন্ধনকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিল, যা আজও আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে রয়েছে।

আধুনিক যুগে রাখি বন্ধন শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি আজকের ভারতবর্ষে ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ ছাড়িয়ে, এই উৎসবটি ভ্রাতৃত্ব, প্রেম এবং সুরক্ষার চেতনা জাগিয়ে তোলার কাজ করে।

রাখি বন্ধন শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সমাজে ভ্রাতৃত্ব, প্রেম, এবং সুরক্ষার চেতনা আমাদের মধ্যে কেমন করে ঐক্য গড়ে তুলতে পারে।

আসুন আমরা সবাই এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করে সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিই এবং আমাদের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করি।

No comments:

Post a Comment